ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের ইতিহাসের বৃহৎ অংশই অধিকার করে আছে ইতিহাসবিখ্যাত মুঘল সালতানাত। মুঘলরা ভারতবর্ষে শুধু ৮০০ বছর শাসনই করেননি; এর পাশাপাশি এ ভূখন্ডের অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, স্থাপত্য, মানুষের অধিকার ইত্যাদিতে ছিলেন অগ্রগামী।
মুঘল সালতানাতে সর্বমোট ১৯ জন শাসক শাসন করেছেন। উনাদের মধ্যে এমনও শাসক ছিলেন যারা ইতিহাসে চরম-পরমভাবে বিখ্যাত হয়ে আছেন। উনাদের শাসনকালকে ভারতবর্ষের ইতিহাসের মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। উনাদের মধ্যেই অন্যতম হলেন মুঘল সালতানাতের ষষ্ঠ শাসক মালিকুল হিন্দ, সুলতানুল আযীম মুহিউদ্দীন মুহম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি শুধু একজন শাসকই নয় বরং তিনি ছিলেন একজন বুজুর্গ ওলীআল্লাহ। উনাকে জিন্দাপীর হিসেবেও ইতিহাসে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ছিলেন বিখ্যাত ওলীআল্লাহ ইমাম মাসুম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ।
উনার শাসনকাল ছিলো ইনসাফপূর্ণ, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বাস্তবায়ন এবং মুসলিম শাসনের বিস্তৃতির এক মহাকাব্য। উনার শাসনকালে মুঘল শাসনের সীমানা ছিলো প্রায় ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার সুদীর্ঘ। উনার সময় ভারতবর্ষে ছিলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির ভূখন্ড। জনসংখ্যা ছিলো ১৬ কোটিরও বেশি।
বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইতিহাস এতো ঝলমলেও হলেও ইতিহাস বিকৃতকারী কলম সন্ত্রাসীরা উনার শাসনকালকেই বার বার টার্গেট করেছে। উনার ইতিহাস বিকৃত করেছে। উনাকে অত্যাচারী শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছে এবং করছে। নাউযুবিল্লাহ! এসব তারা করেই থাকে কট্টর মুসলিমবিদ্বেষ থেকে। তবে তাদের বিদ্বেষ কখনই উনার শান-শওকত মøান করতে পারেনি এবং পারবেনা।
উনার স্বর্ণালী মুসলিম শাসন এবং উনার অসামান্য পরহেজগারী ও মহানুভবতার দৃষ্টান্তগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ! (আজ প্রথম পর্ব)
ইলম অর্জন
শিশুকাল থেকেই তিনি দ্বীন ইসলাম পালনে ব্যাপকভাবে সচেষ্ট ছিলেন। অত্যন্ত কম বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিজ হন। হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার একজন বিজ্ঞ আলিম। তিনি ছিলেন আরবী, ফার্সি ও হিন্দি ভাষায় সমান পারদর্শী। অর্থহীন সবকিছুকেই তিনি প্রচন্ড অপছন্দ করতেন। হোক তা সাহিত্য কিংবা অন্য কিছু।
উনার বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকেই তিনি নিয়মতান্ত্রিক একটি শিক্ষাজীবন লাভ করেন। উনার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন- মোল্লা জিয়ুন রহমতুল্লাহি আলাইহি, মোল্লা মীর মুহম্মদ হাশিম গিলানি রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই। উনারা প্রত্যেকেই ওই যুগে শ্রেষ্ঠ আলিম, ফকিহ এবং মুহাদ্দিস ছিলেন। তবে তিনি মোল্লা মীর মুহম্মদ হাশিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকেই বেশি প্রাতিষ্ঠানিক ইলম হাছিল করেছিলেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিকহের সঙ্গে সুলতানের যে ভালোবাসা এবং ব্যাপক আগ্রহবোধ ছিলো তার মূল প্রেরণা ছিলেন মীর হাশিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি দীর্ঘসময়ব্যাপী উনার সাথে ছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রদত্ত অসাধারণ মেধা ও উপলব্ধি শক্তির অধিকারী ছিলেন বাদশাহ আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। খুব অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও সম্মানিত শরীয়ত উনার অন্যান্য বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করতে সক্ষম হন। উনার হাতে লেখা চিঠিপত্র দেখলে যে বিষয়টি বোঝা যায়- যখন যেখানে যে বিষয়ে প্রয়োজন হতো তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে অনায়াসে সেই বিষয়ের শরীয়ত উনার ফায়সালা উত্তমভাবে দিতে পারতেন।
…..অসমাপ্ত….