“অবশ্যই এই ঘটনা সমূহের মধ্যে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নছীহত।” (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১১)
“পূর্ববর্তীদের ঘটনাসমূহ পরবর্তীদের জন্য নছীহত স্বরূপ”
ঘটনা-২৩: শুকরিয়ায় বৃদ্ধি; আর না শুকরিয়ায় ধ্বংস
হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম একদিন তূর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সাথে কথোপকথন করতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক গরীব মহিলার সাথে উনার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরজু করলো, ‘হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব গরীব। অতি কষ্টে আমার দিন চলে। আপনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলবেন তখন আমার ব্যাপারে একটু জিজ্ঞেস করবেন যে, কি করলে আমি স্বচ্ছলতা পাবো।’ তিনি রাজী হয়ে আবার পথ চলতে লাগলেন। এরপর উনার সাথে এক ধনী মহিলার সাক্ষাত হলো। মহিলা উনার নিকট আরয করলো, ‘হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি খুব ধনী। ধন সম্পদের হিসাব রাখতেই আমার দিন পার হয়ে যায়। আমি বেশি ইবাদত বন্দেগী করার সময় পাই না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে কি করলে আমার ধন সম্পদ কমবে।’ তিনি রাজী হয়ে আবার পথ চলতে লাগলেন। এবার উনার সাথে এক লোকের সাক্ষাত হলো, যার হাত পা কিছুই নেই। লোকটি উনার নিকট আরয করলো, ‘হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমার হাত পা কিছুই নেই। আমি কিছুই করতে পারি না, কোনও কাজেই আসি না। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন যে, তিনি কি উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি রাজী হলেন।
এরপর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত করলেন, কথাবার্তাও বললেন। ফিরে আসার সময় ওই তিনজনের প্রশ্নের কথা উনার মনে পড়ে গেলো। তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রথম সেই গরীব মহিলার প্রশ্নটি পেশ করলেন। জানতে চাইলেন যে, সে গরীব মহিলা কি করলে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে? জবাবে মহান আল্লাহ পাক বললেন, “আপনি তাকে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করতে বলবেন।” তারপর ধনী মহিলার প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কি করলে তার ধন-সম্পদ কমে যাবে? মহান আল্লাহ পাক জবাবে বললেন, “আপনি তাকে বেশি বেশি আমার না-শুকরিয়া করতে বলবেন।” অতঃপর হাত-পা বিহীন লোকটির প্রশ্ন পেশ করলেন যে, কেন তাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হলো? মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তর দিলেন, “আমি তাকে জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”
সাক্ষাত শেষ করে প্রশ্নগুলির জবাব নিয়ে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখন প্রথমে হাত-পা বিহীন লোকটির সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানালেন। বললেন “তোমাকে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের একটি ছিদ্র বন্ধ করবেন বলে সৃষ্টি করেছেন”। হাত-পা বিহীন লোকটি শুনেই বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে একটা কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন।” এটা বলার সাথে সাথেই লোকটির হাত পা গজিয়ে গেল। সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! তারপর সাক্ষাত হলো, ধনী মহিলার সাথে। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তাকেও মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা শুনালেন। বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তোমাকে বলেছেন যে, তুমি যেন বেশী বেশী উনার না-শুকরিয়া করো।” শুনে ধনী মহিলা বলল, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা কিভাবে সম্ভব? যিনি আমাকে এত ধন সম্পদ নিয়ামত দান করলেন আমি উনার না শুকরিয়া করবো কিভাবে? আমি লক্ষ কোটি বার উনার শুকরিয়া আদায় করি।” এটা বলার সাথে সাথে মহিলার ধন সম্পদ আগের তুলনায় কুদরতীভাবে আরও বহুগুণে বেড়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! সবশেষে সাক্ষাত হলো সেই গরীব মহিলার সাথে। তাকে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা জানানো হলো যে, সে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করে; এটা শুনে সে বললো, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটা আপনি কি বললেন? আমার ঘর-বাড়ি নেই, খাবার নেই, কোনো সম্পদ নেই! আমি কিসের জন্য শুকরিয়া আদায় করবো?”এটা বলার সাথে সাথে একটা জোর বাতাসের ঝাপটা এসে সেই মহিলা ও তার কিঞ্চিত যা কিছু ছিলো সবসহ তাকে ধ্বংস করে দিলো। নাউযুবিল্লাহ