-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
অর্থ: “আর (আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যিকির মুবারক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলাম নাশ্রহ্ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব এবং মাহবূব। তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি মুবারক। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে উনার মাহবূব ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানার্থেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত রুবূবিয়াত মুবারক যাহির করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানার্থে, উনার সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য, উনারই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে নেয়া এক কাতরা নূর মুবারক থেকেই সমস্ত সৃষ্টির বিকাশ। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত আরশ মুবারক, সম্মানিত কুরসী মুবারক, সম্মানিত জান্নাত মুবারক, জাহান্নাম, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস, মাটি-পানি, গাছপালা-তরুলতা, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত, জিন-ইনসান, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত মাখলূকাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনার সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য, উনারই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ تَعَالـٰى قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُّوْرِهٖ فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَعَالـٰى
অর্র্থ: “হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম আপনার যিনি মহাসম্মানিত নবী এবং রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত উনার সাথে সম্মানিত সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান করছিলেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছু দিয়ে সৃষ্টি মুবারক করে উনাকে উনার সাথে সংযুক্ত করেছেন এবং উনার যিয়ারত, ছোহবত, দীদার এবং নিয়ন্ত্রণেই উনি আছেন এবং থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন কায়িনাতের কোনো কিছুর মুহ্তায নন, ঠিক তেমনিভাবে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সৃষ্টির কোনো কিছুর মুহ্তায নন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত কুদরত মুবারক উনার মধ্যে, মহাসম্মানিত দীদার মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! আলমে খলক্বের শেষ সীমানা হচ্ছে আরশে আযীম মুবারক। এর উপরে হচ্ছে আলমে আমর। এটাও সৃষ্টির মধ্যে। এ সমস্ত কিছুর উর্ধ্বে হচ্ছে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাক্বাম মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সমস্ত সৃষ্টির উর্ধ্বে উনার উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক জানা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! উনার উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ পৃথিবীর ইতিহাসে আরবীসহ বিভিন্ন ভাষায় অনেক জীবনী মুবারক লেখা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- এ পর্যন্ত উনার উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ সম্পন্ন জীবনী মুবারক লেখা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রত্যেকটি কিতাবেই আক্বীদাগতভাবে তো নানা কুফরী রয়েছেই; এমনকি সন তারীখগুলোও এলোমেলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! মুসলমানদের জন্য ফরয ছিলো- সন তারীখগুলো ঠিক করে বৎসর, মাস ও দিন অনুযায়ী বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক সম্পন্ন একখানা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক লেখা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কেউ এই মহান কাজে হাত দেয়নি। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর বর্তমানে তো এরূপ জীবনী মুবারক লেখার চিন্তা করাটাও একটা অসম্ভব বিষয়। কারণ ছোট-বড় কোনো কিতাবাদিতেই এই বিষয়গুলোর বর্ণনা নেই। তাহলে এটা কি করে সম্ভব?
কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে রয়েছেন মুত্বহ্হার, মুত্বহহির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ২৪ ঘণ্টা দায়িমী হাক্বীক্বী দীদার ও বেমেছাল তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন, “তিনি প্রথমে বৎসর অনুযায়ী, তারপর মাস অনুযায়ী, তারপর দিন অনুযায়ী, অতঃপর ঘণ্টা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জীবনী মুবারক প্রকাশ করবেন।” ইনশাআল্লাহ! সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পর্যন্ত যে সকল তারীখ মুবারক ও বিষয় মুবারকগুলো তিনি কায়িনাতের মাঝে প্রকাশ করেছেন, সে অনুযায়ী এক নজরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বৎসর ভিত্তিক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় জিবনী মুবারক তুলে ধরা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১ম বৎসর মুবারক:
* নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হস্তি বাহিনী ধ্বংস হওয়ার ৫০ দিন পর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আওক্বাত শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছুবহে ছাদিক্ব শরীফ) উনার সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
* নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপিবত্র দুগ্ধ মুবারক পান করান। সুবহানাল্লাহ!
* তারপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বা‘আহ্ আল ঊলা আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত সুওয়াইবাহ্ আলাইহাস সালাম) তিনিও কিছু দিন মহাসম্মানিত ও মহাপিবত্র দুগ্ধ মুবারক পান করান। সুবহানাল্লাহ!
* অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বা‘আহ্ আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালীমাহ সা’দিয়াহ আলাইহাস সালাম) তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দুগ্ধ মুবারক পান করান। সুবহানাল্লাহ!
* সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বা‘আহ্ আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণ করার পর অনেক খায়ের-বরকত মুবারক লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
* সম্মানিত বনূ সা’দ গোত্রের চারণভূমি অনুর্বর ছিলো, সেটা সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে ও ফসল বৃদ্ধি পায় এবং উনাদের গোত্রে খায়ের-বরকত মুবারক বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
* সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আইমান আলাইহাস সালাম) তিনি সার্বিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ মশগূল হন। সুবহানাল্লাহ