নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সার আমদানির লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) বাতিল করেছে সৌদি আরবের দুটি ব্যাংক। ব্যাংক দুটি হল আল-বিলাদ ও ব্যাংক আল জাজিরা। সোনালী ব্যাংকের চারটি এলসি বাতিল করেছে এই দুই ব্যাংক। পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোঅপারেশন (বিসিআইসি) পরে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে চারটির পরিবর্তে দুটি এলসি খুলেছে।
এই ঘটনায় চলমান ও আগামী বোরো মৌসুমের চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া সার সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা করছে বিসিআইসি। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে সার আমদানির এলসিগুলো সৌদি আরবের দুটি ব্যাংক বাতিল করায় উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ্ মুহম্মদ ইমদাদুল চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, সৌদির দুটি ব্যাংক থেকে পরপর চারটি এলসি বাতিলের ঘটনায় আমাদানিতে শিডিউল বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এখনই দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা সার পাচ্ছেন না। ডিলারদের অনেকেই বলছেন, দাম বৃদ্ধি ছাড়াও সার সংকটের কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডলারে অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে প্রতি লটে ৩০ হাজার টনের চারটি লটের ইউরিয়া আমদানি পৌঁছানোয় সৌদি আরবের ব্যাংক আল-বিলাদ এবং ব্যাংক আল জাজিরা এলসি বাতিল করে।
কেন এলসি বাতিল?:
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি আরবের ব্যাংকগুলো ডিও ডেটের আগেই পেমেন্ট চাচ্ছে। এটা দেওয়া হলে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে। এই অবস্থায় কনফারমেশন প্রুভিং ব্যাংক ফান্ড রেইস করবে, সে জন্য তাদের ইন্টারেস্ট দিতে হবে। কিন্তু আমাদের গ্রাহক মার্কেট রেটে নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটে ডলার চাচ্ছে। যে কারণে এটা নিয়ে দুই পক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে সৌদি আরবের দুই ব্যাংক এলসি বাতিল করেছে।
সার সংকটের শঙ্কা:
এদিকে এলসি বাতিল করার ঘোষণায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অবশ্য বিসিআইসি সূত্র বলছে, সারের সরবরাহ এই মুহূর্তে স্বাভাবিক করতে না পারলে চলমান পিক সিজন এবং আসন্ন বোরো মৌসুম ইউরিয়া সারের স্বাভাবিক সরবরাহ ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
এদিকে সার আমদানির জন্য এলসি খোলার তথ্য জানিয়েছেন জনতা ব্যাংকের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুস সালাম। তিনি বলেন, সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে সার আমদানি করা হয়েছে। তবে এর জন্য অ্যাড কনফার্মেশন দেওয়া লাগেনি।
জানা গেছে, সৌদি আরব থেকে প্রতিটি ৩০ হাজার টনের মোট ১৬টি লটে জিটুজি প্রক্রিয়ায় সার আমদানি করছে বাংলাদেশ সরকার। এর প্রথম তিনটি লটের চালান আনলেও পরবর্তী চার লটের সার আমাদানিতে বিপত্তি বাধে। এর মধ্যে চার ও পাঁচ নম্বর লটের সার নেওয়ার জন্য বন্দরে সাত দিন ধরে জাহাজ লোডিংয়ের জন্য রেডি করা ছিল। যে কারণে এই জাহাজে ডেমারেজ হিসেবে প্রতিদিন ২০ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হয়েছে সরকারকে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ্ মুহম্মদ ইমদাদুল হক গভর্নরকে পাঠানো চিঠিতে সার সরবরাহে সংকটের পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, অক্টোবর মাসেই দুই লাখ ৪০ হাজার টন সার আমদানির শিডিউল নির্ধারিত রয়েছে। এর সঙ্গে আপদকালীন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও আরও এক লাখ ৮০ হাজার টন সার আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
শাহ্ মুহম্মদ ইমদাদুল হক চিঠিতে লিখেছেন, সেপ্টেম্বর মাসে এলসি স্থাপনে যে জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়েছে, আগামীতে এলসি স্থাপনে এই সংকট বিদ্যমান থাকলে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে সার সংগ্রহ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বিসিআইসি তথ্য বলছে, চলতি বছরে ইউরিয়ার চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ মেট্রিক টন এবং নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে আট লাখ টন মিলিয়ে মোট ৩৪ লাখ টন।
বিসিআইসি’র তথ্য অনুযায়ী সংস্থাটির চারটি নিজস্ব সার কারখানার মাধ্যমে ১০.৫০ লাখ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে গ্যাস সংকটের কারণে তিন মাসের বেশি সময় ধরে যমুনা সারকারখানা একেবারেই বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংকট ও অব্যাহত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাকি তিনটিরও উৎপাদন সুবিধাজনক পর্যায়ে নেই। যে কারণে পাঁচ লাখ টন ইউরিয়া অতিরিক্ত আমদানির অনুমোদন নিয়েছে বিসিআইসি। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিসিআইসির আমদানি লক্ষ্য ছিল ১৭.৭০ লাখ টনের। এর মধ্যে ১১.৭০ লাখ টনই আমদানি করার কথা সৌদি আরব থেকে। এর বাইরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড বা কাফকোর কাছ থেকে ছয় লাখ টন ইউরিয়া আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়তি পাঁচ লাখ টন ইউরিয়াও আমদানি করা হবে সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে।