গ্রামে বৈষম্য বৃদ্ধির ক্ষতির প্রভাব পড়ছে শহরে।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে নিতে হবে কার্যকরী মেগাপ্রকল্প।
সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরের সুবিধা সম্প্রসারণে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর বাস্তব রূপ দিতে ২৪৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের ২০টি মন্ত্রণালয়ের ২৬টি সংস্থা ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর সমন্বয়কারী হিসেবে আছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে গ্রাম বা পল্লি এলাকা ১ লাখ ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং শহুরে এলাকা ১৪ হাজার ৭৫৭ বর্গ কিলোমিটার। শহরের আয়তনের চেয়ে গ্রামের আয়তন ১ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ বর্গকিলোমিটার বেশি। অর্থাৎ ৮ গুণ বা ৮০০% বেশি। শহরের চেয়ে গ্রামে জনসংখ্যাও বেশি। বাংলাদেশের ৭৫% মানুষ গ্রামে বসবাস করে। এ হিসাবে গ্রামের উন্নয়নই দ্রুত ও বেশি হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা কেবল শহরকেন্দ্রীক। উন্নয়ন কৌশলে শহরের প্রতি পক্ষপাত করে গ্রামীণ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে দারিদ্রের দুষ্টচক্র। অথচ, গ্রামীণ উন্নয়ন হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়বে, প্রবৃদ্ধি বাড়বে, প্রযুক্তি উন্নতর হবে- যাতে দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়ে উচ্চ আয়ের স্তরে নিয়ে যাবে দেশকে। সঙ্গে অধিকতর কর্মসংস্থানও হবে গ্রামীণ এলাকাতে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাম বরাবরের মতো বৈষম্যের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে।
শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। নেই ভালো চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা। অন্যান্য সেবার প্রসারও কম। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার নজির গ্রামের মানুষেরই বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এমন কি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও বেশি। গ্রাম থেকে টাকা এনে শহরের ঋণের জোগান বাড়ানো হচ্ছে। অথচ গ্রামে ঋণ প্রবাহ কম। কিন্তু আমানতের প্রবৃদ্ধির হার বেশি।
গ্রামে কর্মোপযোগী মানুষ বেশি থাকলেও স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কম। যোগাযোগ কাঠামোতেও রয়েছে দুর্বলতা। তাদের সুযোগগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে বেশি সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ কঠিন। দীর্ঘ যানজট ও ট্রেন সার্ভিসের অপ্রতুলতাই এর কারণ। শহরের মানুষের খাদ্যের জোগান আসে গ্রাম থেকে। অর্থাৎ গ্রামের মানুষ খাদ্য উৎপাদনের পর শহরে সরবরাহ করে। খাদ্যের জোগানদাতা হিসাবে গ্রামের মানুষেরই বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না। তারা বরং অবহেলিত ও বঞ্চিত।
বিবিএসের গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী গ্রামে পাকা ও আধা পাকা ঘর ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ, অন্যান্য ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বিদ্যুৎ ব্যবহারেও শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ পিছিয়ে। ফলে কোনো পরিবার একটু সক্ষমতা অর্জন করলেই শিক্ষার জন্য সন্তানদের শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এমনকি সপরিবারে শহরে চলে আসার নজিরও আছে ভূরিভূরি।
গ্রামে চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ গোশত উৎপাদন হচ্ছে। অর্থনীতির নিয়মে পণ্য যেখানে উৎপাদন হয় সেখানে সরবরাহ বেশি থাকে। যে কারণে দামও কম থাকে। এ কারণে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কম থাকার কথা। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আরও কম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৬.২৭%, শহরে এ হার ৫.৬৬%। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার ০.৬১% বেশি।
গ্রামের প্রতি এক বৈষম্যের কারণে শহরের পরিবেশও বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। কারন গ্রামে সুযোগ সুবিধা কম থাকায় বেশি সুযোগ সুবিধার আশায় মানুষ শহরে চলে আসছে। এতে করে প্রতিনিয়ত শহরগুলোতে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়তি এই জনসংখ্যার সকল প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সরবরাহ করতে গিয়ে ঘিঞ্জিময় হয়ে পড়ছে শহরের পরিবেশ।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথেই মৎস্য উৎপাদন, পোল্ট্রি শিল্প, শাক-সবজি-ফলমুল উৎপাদন ইত্যাদি জড়িত। গ্রামীণ ২ কোটি চাষীরাই দেশের খাদ্যচাহিদার সিংহভাগের যোগান দিয়ে থাকে, গ্রামীণ ৬০ লাখ জেলে দেশের আমিষের চাহিদার সিংহভাগ পুরন করে, এছাড়া পোল্ট্রি কিংবা ডেইরি শিল্পের অধিকাংশই গ্রামে গড়ে উঠেছে। সেইসাথে ঢাকা শহরে ৯ লাখ রিক্সাচালক, ৪৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক এবং বিভিন্ন পেশার লোক রয়েছে। যারা সবাই গ্রাম থেকে আসা এবং তাদের আয়ের ৩ ভাগের ২ ভাগই যাচ্ছে গ্রামে। এক্ষেত্রে, সরকার যদি গ্রামপর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে, প্রণোদনা দেয় তথা কৃষকদের জন্য, খামারীদের জন্য, জেলেদের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক সুঠামতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- গ্রাম-নগর বৈষম্য কমাতে হবে। তাই সরকারের উচিত- দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকে একতরফা শহরমুখী না করে গ্রামীণমুখী করা। গ্রামগুলোকে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার অপার শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর সিংহভাগই গ্রামমুখী করতে হবে। বর্তমানে সরকার গ্রামকে ঘিরে যে ২৪৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলোও যাতে দীর্ঘসুত্রিতার ফাঁদে না পড়ে সে বিষয়ে নজরদারি রাখতে হবে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে হবে। প্রকল্পগুলোতে সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
ছহিবে পবিত্র সাইয়্যিদুল সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)